কাঁচা মরিচের ঝাঁঝে পুড়ছে নিম্ন মধ্যবৃত্তরা, নিত্যপন্যের বাজারেও আগুন
- আপডেট সময় : ০২:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৭২ বার পড়া হয়েছে
ব্যয়ের সাথে নেই আয়ের সামঞ্জস্য। ব্যয় বেশি আয় কম । সারাদিন কুলুরবলদের মত খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যে জোটে দিনশেষে ৫০০ টাকা। তারপর আবার সপ্তাহে প্রতিদিন কাজ জোটেনা বা জুটলেও প্রতিদিন কাজ করা সম্ভব হয়না।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টেবর) ঈশ্বরদী উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা সবজির বাজার দাশুড়িয়ায় বাজারের ব্যাগে আধাসের আলু আর তিনটা বেগুন কিনে কাঁচা মরিচের দোকনির কাছে এভাবেই নিজের অব্যক্ত কষ্টের কথা গুলো নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করছেন গৃহনির্মান শ্রমিক নয়ন (৪০)। আলাপ কালে নয়ন জানান বাজারে সবকিছুর যে দাম তাতে আমাদের মত লোকেরা আর কয়দিন বাদে না খেয়ে মরব! কারন যা কামাই করি তাতে তো সংসারের চাল কিনতেই শেষ। তেল নুন কিনব কি দিয়ে।
দরদাম যাচাই করে ঈশ্বরদী উপজেলার একাধিক সবজির বাজার ঘুরে দেখাগেছে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩৬০/৪০০ টাকা, ফুলকপি ৮০, করলা ৭০, লাউ প্রতিটি) ৬০, পেঁপে ২৫-৩০ কেজি, বরবটি ৭০, কচু ৬০, বেগুন ৮০, পটল ৪০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙা ৬০, ওল ১২০, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা (প্রতি কেজি), আলু ৫০-৫৫, পেঁয়াজ ১১০, রসুন ২২০-২৬০, আদা ৩০০, এবং ঢেঁড়স ৪০ টাকা প্রতি কেজি কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা, পুঁই শাক আঁটি ২০-২৫ টাকা, লাল ও সাদা শাকের আটি ১০ টাকা ।
মাছ কিনতেও হাসফাস খাচ্ছে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, ১ কেজি ওজনের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০/৩৮০ টাকা কেজিতে, মিরর কার্প ২৪০ টাকা কেজি, ৬ পিচে কেজি ইলিশের কেজি ৮৫০ থেকে শুরু, পাঙ্গাস ১৯০, সিলভার ১৮০/২২০ টাকা (১ কেজি), তেলাপিয়া ১৭০, ছোট রুই ২৮০ থেকে শুরু, ছোট চিংড়ি ১০০০ টাকা, গুড়া মাছ ৬০০ থেকে শুরু। টেংরা মাছের কেজি চলছে ৪৫০ টাকা।
ঈশ্বরদী পৌর কাঁচা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা ফরজ আলী বলেন, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারনে ঈশ্বরদীর অনেক সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব কৃষকরা আগে মাল আনত ভ্যান ভরে তারা এখন মাল আনে ব্যাগে করে সাইকেলের সাথে করে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় মূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে মন্তব্য করেন এই বিক্রেতা।
বাজার করতে আসা অটো চালক মো. রমজান আলী বলেন, প্রতিদিনই সবজির দাম কিছু না কিছু বাড়তেই আছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আমরা সংসার চালাবো কি করে?
দাশুড়িয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. করিম মোল্লা বলেন, অনেক কৃষকের ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদানি কম থাকায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা যেহেতু কিনছি বেশীদামে কমদামে তাই সেই অনুপাতে দাম রেখে বিক্রি করছি। আমাদের ও তো পরিবার আছে।
উপজেলার মুলাডুলি বাজারের কয়েকজন সবজি বিক্রেতা জানান, চারদিকের সব পানিতে ডুবে শেষ। এখন যা আছে তা দিয়েই কৃষক পুষায়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা বাজারে কোন মালই কমদামে বেচে না। তাই আমরাও কমদামে কিনতি পারিনি। বেচতিও পারিনি।
অন্যদিকে বাজার ঘুরে দেখাযায় সোয়াবিন ১৮০ টাকা কেজি যা ১৫দিন আগে ছিল ১৬০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে ১ কেচ ডিম অর্থ্যাৎ ৩০ টি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। বয়লার মুরগীর কেজি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালীর কেজি ২৬০-২৭০ টাকা, গরুর গোস্ত প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, খাশি ১০০০ টাকা কেজি।
মোটা এবং চিকন চালের আকার ভেদে প্রতি কেজি চালে ৬ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসের ব্যবধানে চালের দামের এই তারতম্যের কারনে বিপাকে পরেছে নিন্ম আয়ের মানুষ। তবে চাল ব্যাবসায়ীরা চালের বাজার বৃদ্ধির জন্য ধানের মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ি করছে।
ঈশ্বরদী উপজেলার বড়ইচারা, জয়নগর, শিমুলতলা, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি,আওতাপাড়া, সিলিমপুর, ঢুলটি এবং ঈশ্বরদী বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সাথে আলাপ কালে জানা গেছে, আঠাশ, গুটিস্বর্ণা, স্বর্ণা ৫, উনপঞ্চাশ, ধানিগোল্ডসহ সকল প্রকার মোটা চালে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা আর মিনিকেট,বাসমতি কাটারিসহ সকল চিকন চাউলে দাম বেড়েছে কেজি প্রতি প্রায় ১০ টাকা।
বাজার মনিটরিং বিষয়ে জনাতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনির সাথে তার মুটো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান নিয়মিত ভাবে আমরা বাজার মনিটরিং করছি। আশা করি নিত্যপন্যের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।










