ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির ছায়া
নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

- আপডেট সময় : ১১:৫৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের কারণে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
চাঁদাবাজির অভিযোগে আলোচনায় বাচ্চু মিয়া :
গত ঈদুল ফিতরের আগে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়ার নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় একটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল-এসএ টিভি- ও দৈনিক সংবাদ সারাবেলায় বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়।
কাজ না করেই মোবাইল মেইনটেনেন্সের কোটি টাকা আত্মসাৎ :
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মোবাইল মেইনটেনেন্স খাতে বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকার বেশিরভাগ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, একাধিক রাস্তার একই ছবি বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে, অথচ বাস্তবে কোনো কাজই সম্পন্ন হয়নি।
নিজ ভাই ও মেয়ের নামে দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ :
নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া তার ভাই মো. শহিদুল ইসলাম (সুমন)-এর নামে এলজিইডিতে দুটি তালিকাভুক্তি লাইসেন্স করান – মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ ও মোহনা এন্টারপ্রাইজ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি কেবল একটি তালিকাভুক্তি করতে পারেন। কিন্তু বাচ্চু মিয়া নিয়ম ভেঙে দুটি লাইসেন্সের মাধ্যমেই নিজের অফিসের কাজ ভাগ করে দেন। এর মধ্যে মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ নামে অফিস ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দেখিয়ে প্রায় ৪৮.৮ লাখ টাকা তোলা হয়েছে, অথচ বাস্তবে কাজের কোনো অস্তিত্ব নেই। অন্যদিকে, মোহনা এন্টারপ্রাইজ নামে ৩.৯৮ লাখ টাকার কাজ নিজের মেয়ের নামে অনুমোদন দেন।
অফিসে অনুপস্থিতি, রাতে রাজনীতি ও অফিস পরিচালনা :
অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চু মিয়াকে দিনের বেলায় অফিসে সচরাচর দেখা যায় না। তবে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি অফিসে অবস্থান করে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে নিজের পদ রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন বলেও জানা গেছে।
কর্মচারীদের হয়রানি ও স্বেচ্ছাচারিতা :
অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলীর অযৌক্তিক আচরণ ও হয়রানির কারণে বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারী স্বেচ্ছায় বদলি নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিত কর্মীদের সরিয়ে নিজস্ব লোক দিয়ে অফিস পরিচালনা করেন, যা প্রশাসনিক নীতিমালা পরিপন্থী।
কণ্ঠ নকল করে পদোন্নতির কেলেঙ্কারি :
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে – ২০২২ সালে বাচ্চু মিয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কণ্ঠস্বর নকল করে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে ফোন করে নেত্রকোণায় নিজের পদোন্নতির ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি ফাঁস হলে তাকে দ্রুত সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে কাপাসিয়া, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জেও তার বিরুদ্ধে ইউএনও বদলি করানো, সহকর্মীদের লাঞ্ছিত করা এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক রঙ বদলে টিকে থাকা :
বাচ্চু মিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসও কম বিতর্কিত নয়। তার মা একসময় জাতীয় পার্টির মহিলা নেত্রী ছিলেন। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনিও বিএনপি ঘনিষ্ঠ হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজেকে আওয়ামী সমর্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তবে ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে আবারও নিজেকে বিএনপি সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এই রাজনৈতিক রূপান্তরই নাকি এলজিইডি ঢাকা জেলায় তার প্রভাব ও ত্রাসের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার মূল অস্ত্র।
দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি :
অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চু মিয়া মাসের পর মাস দরপত্রের মূল্যায়ন ঝুলিয়ে রাখেন এবং বৈধ নিম্নদরের ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেন। সম্প্রতি উত্তরায় তিনটি স্কুল ভবনের দরপত্রে একই ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। তিনি সেখানে ৭-৮ শতাংশ বেশি দরদাতাদের পক্ষে সুপারিশ করলে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি জেনে তিনটি প্রকল্পেই পুনঃদরপত্রের নির্দেশ দেন।
অভিযুক্তের বক্তব্য পাওয়া যায়নি –
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি।