সোনাতলায় অনলাইন জুয়ার সর্বনাশা থাবা: বিলীন হচ্ছে তারুণ্য, সর্বস্বান্ত বিভিন্ন পেশার মানুষ

- আপডেট সময় : ০২:৪৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ৯ বার পড়া হয়েছে
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা বর্তমানে এক নীরব সামাজিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। উপজেলার সোনাতলা পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন জোড়গাছা, বালুয়া, দিগদাইড়, মধুপুর, তেকানী চুকাইনগর, পাকুল্যা এবং সোনাতলা সদর ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে অনলাইন জুয়ার মরণছোবলে দ্রুত নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ। এই ডিজিটাল নেশা কেবল শহরতলীতেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামীণ সমাজেও আর্থিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জুয়া সাইট ও অ্যাপস এখন সোনাতলার তরুণদের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। স্মার্টফোনে সহজে প্রবেশযোগ্য এসব জুয়ার ফাঁদে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দিনমজুর, অটোভ্যান চালক, এমনকি ছোট ব্যবসায়ীরাও তাদের কষ্টের উপার্জন ও সঞ্চয় হারাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই জুয়ার আসক্তি বহু পরিবারে চরম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। অনেক যুবক জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। শুধু তাই নয়, চুরি, ছিনতাই এবং পারিবারিক সম্পদ গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার মতো ঘটনাও বাড়ছে। জুয়ার টাকার লেনদেন নিয়ে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনাও ঘটছে মাঝে মাঝে, যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে।
সোনাতলা পৌরসভার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আগে খেলাপাগল ছেলেরা মাঠে খেলত, এখন তারা হাতে স্মার্টফোন নিয়ে জুয়ায় মগ্ন। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগীর বাবা জানান, “আমার ছেলে আগে ভালো ছাত্র ছিল, এখন সারাক্ষণ মোবাইলে জুয়া খেলে। ইতোমধ্যে সে আমাদের সামান্য যা কিছু ছিল, সব খুইয়ে ফেলেছে। বাড়িতে এখন নিত্যদিন অশান্তি।”
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনলাইন জুয়ার প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক। যেখানে কৃষি ও ছোট ব্যবসা-বাণিজ্য মানুষের প্রধান জীবিকা, সেখানে হঠাৎ করে এমন সর্বনাশা নেশার বিস্তার সামগ্রিক জীবনযাত্রায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
সোনাতলা উপজেলাকে এই অনলাইন জুয়ার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসন এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, কেবল ধরপাকড় নয়, প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং জুয়ার সাইটগুলো বন্ধে কার্যকর সাইবার নজরদারি প্রতিষ্ঠা করা। অন্যথায়, ঐতিহ্যবাহী সোনাতলার যুবসমাজ দ্রুত বিলীন হয়ে যাবে এক সর্বনাশা ডিজিটাল ফাঁদে।