ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উচ্চ মূল্যেও লোকসানের চাপে ঈশ্বরদীর শিম চাষীরা

পাবনা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:০৬:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে

পাইকারী বাজারে শিমের কেজি ৪০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে এই শিমের কেজি দাড়িয়েছে ৬০ টাকায়। মৌসুমের এই সময়েও শিমের এমন আকাশ চুম্বী দামে দিশেহারা সাধারণ জনগন। অন্যদিকে চলমান এই উচ্চ মুল্যেও লোকসানের চিন্তায় হাঁশফাঁস করছে ঈশ্বরদীর শিম চাষীরা।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে শিম চাষের মোট লক্ষমাত্রা রয়েছে ১২৯০ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে অত্রাঞ্চলে আগাম শিম হিসেবে ইতোমধ্যেই ৯১০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৮০ হেক্টর জমিতে শীত কালীন শিম চাষ হবে বলে জানা গেছে। সেই হিসেব অনুযায়ী এ অঞ্চলের কৃষকরা এবছর আগাম জাতের শিমচাষ করে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকার মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেও অফিস সূতে জানানো হয়েছে।

এদিকে উপজেলার শিম প্রধান এলাকা বাঘহাছলা, পতিরাজপুর, অরণকোলা, মুলাডুলি, রামনাথপুর, মারমী, সুলতানপুর, শেখপাড়া প্রভৃতি অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, শিম ও শিমের ফুল শূন্য শিমের মাচানে কাজ করছে কৃষক এবং কৃষাণীরা।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল এবং সন্ধ্যায় নিয়মিত রুটিন করে শিমের জমিতে ও মাচানে কাজ করতে হয় তাদের। শিম গাছের লতা ছাড়ানো, শুকিয়ে যাওয়া ফুল পরিষ্কার করা এবং নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যায় ছত্রাক নাশক, ভিটামিন ও পঁচন রোধে স্পে করতে হয় শিম গাছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচের চেয়ে ফলন কম থাকায় লোকসানে পড়তে হবে তাদের বলেও জানান কৃষকরা।
ঢুলটি এলাকার শিম চাষী সাইদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কীটনাষক ব্যবসায়ীদের মানহীন কীটনাশক বিক্রির ফলে আমরা চাষীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। কেননা মানহীন কোম্পানীর যথাতথা কীটনাষক দোকানিরা বিক্রিকরে অধিক টাকা মুনাফা করতে পারে বলে তারা এসব কোম্পানির বালাইনাষক বেশী বিক্রি করে। এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরেন। কারন এসব নিন্ম মানের বালাই নাষক কোন উপকারে আসেনা কৃষকের ফসলের জন্য।

রেজওয়ান নগর এলাকার শিম চাষী মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সবজির তুলনায় শিমচাষে সবচেয়ে বেশী পরশ্রমের প্রয়োজন হয়। সেই সাথে প্রচুর পরিমান কীটনাষক প্রয়োগ করতে হয়। এতে করে মৌসুমের শুরুতে শিমের ফলন কম থাকলেও দাম থাকে তুলনামূলক ভাবে বেশী। দাম বেশী থাকায় কম উৎপাদনেও খরচ পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও দাম কমার সাথে সাথে উৎপাদন না বাড়ায় লোকসানের চিন্তায় কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে কৃষকদের।

রামনাথপুর এলাকার শিম চাষী ইমরান হোসেন জানান, বাজারে কিছু কিছু কীটনাষক ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন যেগুলো আমাদের ফসলে ব্যবহার করে আমরা আরও ক্ষতির সম্মূখিন হয়ে পড়েছি। কেননা এসব বালাই নাষক ব্যবহার করে আমাদের গাছের ফুল ও শিমের কড়ি ঝড়ে পড়ছে। গাছ দূর্বল হয়ে গেছে। এতে করে আমাদের ফসলের ফলন কমার শত ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ব।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন বলেন, বর্তমানে দেশের বাজারে ৭ থেকে ৮ শত রেজিষ্ট্রেশন করা বৈধ কীটনাষক কোম্পানী রয়েছে। যাদের মধ্য থেকে প্রতিমাসে তাদের পণ্যের গুনগত মান যাচাই করতে আমরা নিয়মিত ল্যাবে প্রেরণ করে থাকি। এর মধ্যেও কোম্পানি গুলো মানহীন পন্য উৎপাদন করে ফেলে। এতে আমাদের কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে কৃষকদের ভালো কোম্পানি খুঁজে সেই পণ্য গুলো ব্যবহার করার নির্দেশ দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এবছর আগাম শিম উৎপাদন কারীরা বিঘা প্রতি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মুনাফা অর্জন করেছে। এ অঞ্চলে এ বছর মোট ১২৯০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৯১০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করেছে কৃষকরা। তবে ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের শিমের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত গুণগত মানসম্পন্ন বালাই নাষক স্পে করতে হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

উচ্চ মূল্যেও লোকসানের চাপে ঈশ্বরদীর শিম চাষীরা

আপডেট সময় : ০২:০৬:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

পাইকারী বাজারে শিমের কেজি ৪০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে এই শিমের কেজি দাড়িয়েছে ৬০ টাকায়। মৌসুমের এই সময়েও শিমের এমন আকাশ চুম্বী দামে দিশেহারা সাধারণ জনগন। অন্যদিকে চলমান এই উচ্চ মুল্যেও লোকসানের চিন্তায় হাঁশফাঁস করছে ঈশ্বরদীর শিম চাষীরা।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে শিম চাষের মোট লক্ষমাত্রা রয়েছে ১২৯০ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে অত্রাঞ্চলে আগাম শিম হিসেবে ইতোমধ্যেই ৯১০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৮০ হেক্টর জমিতে শীত কালীন শিম চাষ হবে বলে জানা গেছে। সেই হিসেব অনুযায়ী এ অঞ্চলের কৃষকরা এবছর আগাম জাতের শিমচাষ করে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকার মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেও অফিস সূতে জানানো হয়েছে।

এদিকে উপজেলার শিম প্রধান এলাকা বাঘহাছলা, পতিরাজপুর, অরণকোলা, মুলাডুলি, রামনাথপুর, মারমী, সুলতানপুর, শেখপাড়া প্রভৃতি অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, শিম ও শিমের ফুল শূন্য শিমের মাচানে কাজ করছে কৃষক এবং কৃষাণীরা।

তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল এবং সন্ধ্যায় নিয়মিত রুটিন করে শিমের জমিতে ও মাচানে কাজ করতে হয় তাদের। শিম গাছের লতা ছাড়ানো, শুকিয়ে যাওয়া ফুল পরিষ্কার করা এবং নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যায় ছত্রাক নাশক, ভিটামিন ও পঁচন রোধে স্পে করতে হয় শিম গাছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচের চেয়ে ফলন কম থাকায় লোকসানে পড়তে হবে তাদের বলেও জানান কৃষকরা।
ঢুলটি এলাকার শিম চাষী সাইদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কীটনাষক ব্যবসায়ীদের মানহীন কীটনাশক বিক্রির ফলে আমরা চাষীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। কেননা মানহীন কোম্পানীর যথাতথা কীটনাষক দোকানিরা বিক্রিকরে অধিক টাকা মুনাফা করতে পারে বলে তারা এসব কোম্পানির বালাইনাষক বেশী বিক্রি করে। এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পরেন। কারন এসব নিন্ম মানের বালাই নাষক কোন উপকারে আসেনা কৃষকের ফসলের জন্য।

রেজওয়ান নগর এলাকার শিম চাষী মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সবজির তুলনায় শিমচাষে সবচেয়ে বেশী পরশ্রমের প্রয়োজন হয়। সেই সাথে প্রচুর পরিমান কীটনাষক প্রয়োগ করতে হয়। এতে করে মৌসুমের শুরুতে শিমের ফলন কম থাকলেও দাম থাকে তুলনামূলক ভাবে বেশী। দাম বেশী থাকায় কম উৎপাদনেও খরচ পুষিয়ে যায়। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও দাম কমার সাথে সাথে উৎপাদন না বাড়ায় লোকসানের চিন্তায় কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে কৃষকদের।

রামনাথপুর এলাকার শিম চাষী ইমরান হোসেন জানান, বাজারে কিছু কিছু কীটনাষক ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন যেগুলো আমাদের ফসলে ব্যবহার করে আমরা আরও ক্ষতির সম্মূখিন হয়ে পড়েছি। কেননা এসব বালাই নাষক ব্যবহার করে আমাদের গাছের ফুল ও শিমের কড়ি ঝড়ে পড়ছে। গাছ দূর্বল হয়ে গেছে। এতে করে আমাদের ফসলের ফলন কমার শত ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ব।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন বলেন, বর্তমানে দেশের বাজারে ৭ থেকে ৮ শত রেজিষ্ট্রেশন করা বৈধ কীটনাষক কোম্পানী রয়েছে। যাদের মধ্য থেকে প্রতিমাসে তাদের পণ্যের গুনগত মান যাচাই করতে আমরা নিয়মিত ল্যাবে প্রেরণ করে থাকি। এর মধ্যেও কোম্পানি গুলো মানহীন পন্য উৎপাদন করে ফেলে। এতে আমাদের কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে কৃষকদের ভালো কোম্পানি খুঁজে সেই পণ্য গুলো ব্যবহার করার নির্দেশ দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এবছর আগাম শিম উৎপাদন কারীরা বিঘা প্রতি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মুনাফা অর্জন করেছে। এ অঞ্চলে এ বছর মোট ১২৯০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৯১০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করেছে কৃষকরা। তবে ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের শিমের ভালো ফলন পেতে নিয়মিত গুণগত মানসম্পন্ন বালাই নাষক স্পে করতে হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।